শেখ হাসিনা কেন এত জনপ্রিয়?
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৯ সাল থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর এই দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ। নিচে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
১. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেপথ্য নেতৃত্ব
- জিডিপি বৃ'দ্ধি ও মেগা প্রকল্প:
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃ'দ্ধির হার ৬-৭% এ স্থিতিশীল হয়েছে (বিশ্বব্যাংক, ২০২৩)। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগু'লো দেশের অবকাঠামো বিকাশে বিপ্লব এনেছে।- পদ্মা সেতু: দেশের অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দিয়েছে।
- ডিজিটাল বাংলাদেশ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব:
২০০৮ সালে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ভিশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ই-গভর্ন্যান্স চালু করে সাধারণ মানুষের জীবন সহজ করেছেন। বর্তমানে ১৩ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে (BTRC, ২০২৩)। - গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ:
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃ'হত্তম র'প্তানিকারক। এই খাতে ৪০ লাখের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করেন, যা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রেখেছে।
২. সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক পদ'ক্ষেপ
- দারিদ্র্য বিমোচন:
গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৪০% থেকে ১৮.৭% এ নেমেছে (বিবিএস, ২০২৩)। ভিজিডি, ভিজিএফ, আশা কার্যক্রমের মতো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগু'লো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেছে। - শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিপ্লব:
- মিড-ডে মিল: প্রাথমিক স্কুলে উপস্থিতি ৯৮% এ পৌঁছেছে।
- সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
- মাতৃমৃ'ত্যু হার হ্রাস: ২০০১ সালে প্রতি লাখে ৩২০ জন থেকে ২০২৩ সালে ১৪৫ জনে নেমেছে।
- নারীর ক্ষমতায়ন:
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউএন শান্তিরক্ষী—সব ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে। বাংলাদেশে এখন নারী শিক্ষার হার ৭৩% (ইউনেস্কো, ২০২৩)।
৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাহসী নেতৃত্ব
- স'ন্ত্রাস ও জ''ঙ্গিবাদ দমন:
২০০০-এর দশকের জ''ঙ্গি হা'মলা (যেমন: হলি আর্টিজান) মোকাবিলায় শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাংলাদেশ এখন “মডারেট মুসলিম দেশ” হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। - রোহি''ঙ্গা সংকটে মানবিকতা:
২০১৭ সালে মিয়ানমা'র থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহি''ঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই সি'দ্ধান্তের জন্য তিনি গ্লোবাল লিডার'শিপ পুরস্কার পেয়েছেন। - আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মর'্যাদা:
শেখ হাসিনাকে “আইরন লেডি” বলা হয়। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার গু'রুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছেন।
৪. ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প
- পরিবারের трагеি:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ব''ঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের 'হ'ত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। - জীবনবাজি রেখে লড়াই:
২০০৪ সালে গ্রে'নেড হা'মলা, ২০০৭ সালে কারা'বরণ—নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখেও গণতন্ত্র পুনরু'দ্ধারে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
৫. জনগণের সাথে সরাসরি সংযোগ
- গণশুনানি ও সরাসরি যোগাযোগ:
তিনি নিয়মিত “জনগণের সাথে প্রধানমন্ত্রী” নামক অনুষ্ঠানে সরাসরি ফোনে সমস্যা শোনেন এবং সমাধান দেন। - সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার:
ফেসবুক, টুইটারে তাঁর অফিসিয়াল পেজের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী সি'দ্ধান্তগু'লো সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেন।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
- গণতান্ত্রিক শূন্যতার অ'ভিযোগ:
বিরোধী দলগু'লি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অ'ভিযোগ তোলে। তবে সরকার দাবি করে, উন্নয়নমূলক কাজের কারণে জনগণের সমর'্থন অটুট। - মিডিয়া ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা:
কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সরকারের যুক্তি—নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা জরুরি।
উপসংহার: জনপ্রিয়তার মূলে উন্নয়ন ও সংগ্রাম
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো সামষ্টিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্ট্যাব'িলিটি। তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি যু'দ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মধ্য আয়ের স্তরে নেওয়া সম্ভব। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু পরিসংখ্যানে নয়—গ্রামের কৃষক থেকে শহরের তরুণ, সবাই তাঁর কাজে আশার আলো দেখে। যেমন তিনি বলেছেন, “আমা'র স্বপ্ন হলো ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।” এই স্বপ্নের স''ঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
জনপ্রিয়তার মূল কারণগু'লোর সারসং'ক্ষেপ:
- অর্থনৈতিক প্রবৃ'দ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়ন।
- দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা।
- নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রসার।
- সাহসী কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
- ব্যক্তিগত ত্যাগ ও গণমুখী নেতৃত্ব।
ড. মুহা'ম্ম'দ ইউনুস কেন এত বিখ্যাত?
ড. মুহা'ম্ম'দ ইউনুস শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে “মাইক্রোক্রে'ডিটের জনক” এবং সামাজিক ব্যবসার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তাঁর কাজ গরিব মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিপ্লব এনেছে, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। নিচে তাঁর বিখ্যাত হওয়ার মূল কারণগু'লি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
১. মাইক্রোফাইন্যান্স ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা
১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে একটি ক্ষুদ্র গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ড. ইউনুস মাইক্রোক্রে'ডিট ধারণার জন্ম দেন। তিনি দেখেন, সামান্য টাকা (প্রায় ২৭ ডলার) দিয়ে গরিব মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এই ভাবনা থেকেই ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক, যা বিশ্বের প্রথম সংস্থা যেটি ঋণ নেওয়ার জন্য জামানত বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বদলে মানুষের আস্থাকে মূলধন হিসেবে গণ্য করে।
মাইক্রোক্রে'ডিটের বৈশ্বিক প্রভাব
- নারী ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭% গ্রাহক নারী। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হয়েছে।
- দারিদ্র্য বিমোচন: বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২০০০ সালের ৪৮.৯% থেকে ২০২৩ সালে ১৮.৭% এ নেমেছে।
- বিশ্বজুড়ে অনুকরণ: ভারতের স্বয়ং শ্রী, মেক্সিকোর কম্পার্টামোস-এর মতো সংস্থাগু'লো গ্রামীণ মডেল অনুসরণ করে।
২. নোবেল শান্তি পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
২০০৬ সালে ড. ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌ'থভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটি তাঁকে “নিম্নবর্গ থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য লড়াই” করার জন্য সম্মানিত করে। এই পুরস্কার তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেয়।
- অন্যান্য পুরস্কার: প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (যুক্তরাষ্ট্র), কংগ্রে'শনাল গোল্ড মেডেল, এবং বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ থেকে সম্মাননা।
- টাইম ম্যাগাজিন: তাঁকে “বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩. সামাজিক ব্যবসার ধারণার প্রবর্তক
ড. ইউনুসের মতে, “লাভের জন্য নয়, সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবসা” হওয়া উচিত। এই ভাবনা থেকে তিনি সামাজিক ব্যবসা (Social Business) ধারণার প্রচলন করেন।
উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ
- গ্রামীণ ড্যানোন: ফ্রান্সের ড্যানোনের সাথে যৌ'থভাবে পুষ্টিকর দই উৎপাদন, যা স্থানীয় দারিদ্র্য ও অ’প'ুষ্টি কমায়।
- গ্রামীণ ফোন: গ্রামীণ নারীদের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়, যারা তা ভিলেজ ফোন অ’প'ারেটর হিসেবে ব্যবহার করে আয় করেন।
- গ্রামীণ শক্তি: সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া।
৪. শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান
- শিক্ষক হিসেবে ইউনুস: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
- গবেষণা ও বই: তাঁর লেখা “Banker to the Poor” বইটি বিশ্বজুড়ে বেস্টসেলার। এতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে ক্ষুদ্রঋণ সামাজিক পরিবর্তন আনতে পারে।
- ইউনুস সেন্টার: বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে তাঁর সামাজিক ব্যবসা মডেল নিয়ে কাজ করছে।
৫. বৈশ্বিক নীতি ও উন্নয়ন লক্ষ্যে প্রভাব
- জাতিসং'ঘের SDGs: দারিদ্র্য বিমোচন, লি''ঙ্গসমতা ও টেকসই উন্নয়নে ইউনুসের কাজ জাতিসং'ঘের লক্ষ্যগু'লিকে প্রভাবিত করেছে।
- গ্লোবাল লিডার'শিপ: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডেভোস) সহ আন্তর্জাতিক ফ্ল্যাটফর্মে তিনি নিয়মিত বক্তৃতা দেন।
৬. বিতর্ক ও সমালোচনা
রাজনৈতিক টানাপোড়েন
বাংলাদেশ সরকারের সাথে তাঁর সম্পর্ক জটিল। ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং ২০২৩ সালে শ্রম আইন ল'ঙ্ঘনের মা'মলায় তাঁর বিরু'দ্ধে অ'ভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
মাইক্রোফাইন্যান্স নিয়ে বিতর্ক
কেউ কেউ যুক্তি দেন, উচ্চ সুদের হার (২০-৩০%) গরিবদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে ইউনুস পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, “ঋণের সুযোগ না পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সুদ।”
৭. ব্যক্তিগত জীবন ও মূল্যবোধ
- শিক্ষাজীবন: ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি।
- মূলমন্ত্র: “সব মানুষের মধ্যে উদ্যোক্তা সু'প্ত থাকে। শুধু সুযোগ দিতে হবে।”
- পরিবার: স্ত্রী আফরোজী ইউনুস ও দুই কন্যা মোনিকা ও দীনা।
উপসংহার: একজন বিপ্লবীর উত্তরাধিকার
ড. ইউনুসের খ্যাতি শুধু একটি ব্যাংক বা পুরস্কারের মধ্যে সীমাব'দ্ধ নয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, দারিদ্র্য অদৃশ্য করা সম্ভব। তাঁর কাজের মাধ্যমে লক্ষ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। তাঁর নিজের কথায়, “দারিদ্র্য মানুষের অক্ষমতায় নয়, ব্যবস্থার ব্যর্থতায় হয়।” বিশ্বজুড়ে তাঁর আদর্শ এখনও অনুপ্রেরণার উৎস।
ড. ইউনুসের বিখ্যাত হওয়ার মূল কারণ:
- মাইক্রোক্রে'ডিটের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।
- নোবেল শান্তি পুরস্কার ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি।
- সামাজিক ব্যবসার মতো উদ্ভাবনী ধারণা।
- শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান।
- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নীতিতে প্রভাব।