ভূমিকা: রমজান ও বিবাহ—দুই ইবাদতের সমন্বয়
রমজান মাসে বিয়ে করার সি'দ্ধান্ত নিলে মনে 'হতেই পারে—”এই পবিত্র মাসে দাম্পত্য জীবন শুরু করা কি ঠিক হবে?” ঢাকার একটি ঘটনা থেকে শুরু করি: গত বছর রমজানে সাদিয়া ও তার ফিয়ান্সে রাকিবের বিয়ে হয়েছিল। তাঁরা দিনের বেলা সম্পূর্ণ রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রথম দেখা করেন। তাদের গল্পটি ইসলামি বিধান ও বাস্তবতার মেলবন্ধনের উদাহরণ। এই লেখায় জানুন, রমজানে বিয়ের ইসলামি বিধান, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং কীভাবে এই মাসেই সুখী দাম্পত্য শুরু করা যায়!
ইসলামি দৃষ্টিতে রমজানে বিয়ের হুকুম
কুরআন-হাদিসের আলোকে
ইসলামে রমজানসহ যেকোনো সময় বিয়ে করা জায়েজ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমা'দের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে সম্পন্ন করো।” (সুরা আন-নুর: ৩২)
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন:
“বিয়ে আমা'র সুন্নত। যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমা'র উম্মত নয়।” (ইবনে মাজাহ)
বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা: ইসলামিক স্কলার ড. জাকির নায়েক উল্লেখ করেন, “রমজানে বিয়ে নি'ষি'দ্ধ—এমন কোনো দলিল নেই। তবে রোজার সময় সিয়ামের বিধান মেনে চলা আবশ্যক।”
রমজানে বিয়ের সময় সতর্কতা: যা জানা জরুরি
দিনের বেলায় স্ত্রী সহ'বাস নি'ষি'দ্ধ
রোজা অবস্থায় ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যৌ'ন সম্পর্ক হারাম। এটি রোজা ভ''ঙ্গের কারণ এবং এর জন্য কাফ্ফারা (প্রায়শ্চিত্ত) প্রযোজ্য:
- ১টি গো'লাম আযাদ করা।
- না পারলে ৬০ দিন রোজা রাখা।
- তাও অসম্ভব হলে ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়ানো।
বাস্তব উদাহরণ: ২০২২ সালে কুমিল্লার এক যুবক রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহ'বাস করায় তাঁকে ৬০ দিন রোজা রাখতে হয়েছিল।
বিয়ের অনুষ্ঠান ও রোজা
- ওয়ালিমা: রোজা রেখে ওয়ালিমা'র আয়োজন করা যায়, তবে রাতের সময়কে প্রাধান্য দিন।
- মেহেদী, গায়ে হলুদ: দিনে আয়োজন করলে পানাহার এড়িয়ে চলুন।
রমজানে বিয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা
১. আধ্যাত্মিক পরিবেশ: পবিত্র মাসে শুরু হওয়া দাম্পত্য পবিত্র নিয়তের প্রতীক।
২. সম্পর্কের বরকত: রমজানের রহমত দাম্পত্য জীবনে শান্তি আনে।
৩. সওয়াবের সুযোগ: বিয়ের পাশাপাশি তারাবিহ, কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব।
অসুবিধা
১. আ'ত্মসংযমের চ্যালেঞ্জ: নতুন দম্পতির জন্য দিনে সংযম রাখা কঠিন 'হতে পারে।
২. সময় ব্যবস্থাপনা: রোজা রেখে বিয়ের প্রস্তুতি ক্লান্তিকর।
৩. সামাজিক চাপ: আ'ত্মীয়-স্বজনের আপ'ত্তি বা কুসংস্কার।
আলেম'দের পরামর'্শ: কখন রমজানে বিয়ে করবেন?
যাদের জন্য উপযুক্ত
- যারা দিনে সংযম রাখতে আ'ত্মবিশ্বা'সী।
- যাদের বিয়ের তারিখ আগে থেকেই রমজানে নির্ধারিত।
- যারা রাতেই দাম্পত্য জীবন শুরু করতে চান।
যাদের পিছিয়ে দেওয়া উচিত
- যাদের আ'ত্মনিয়ন্ত্রণে সন্দে'হ আছে।
- যাদের শারীরিক দুর্বলতা বা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা আছে।
- যারা মনে করেন বিয়ের চাপে ইবাদতে ব্যাঘা'ত ঘটবে।
ইফতা বিভাগের রায়: বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঘোষণা করে, “রমজানে বিয়ে জায়েজ, তবে ফিকাহির শর্ত মেনে চলুন।”
বাস্তব জীবনের গল্প: রমজানে বিয়ের অ'ভিজ্ঞতা
সফল কেস: সাদিয়া-রাকিব
সাদিয়া ও রাকিব গত বছর রমজানে বিয়ে করেন। তাঁরা দিনে রোজা রাখতেন এবং রাতে তারাবিহ পড়ে সময় কা'টাতেন। সাদিয়া বলেন, “ইফতারের পর প্রথম দেখা হয়েছিল—সেটাই ছিল আমা'দের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।”
চ্যালেঞ্জের কেস: আরিফ-তানজিন
আরিফ স্বীকার করেন, “প্রথম দিনেই সংযম হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরে কাফ্ফারা দিতে হয়েছে। এখন পরামর'্শ দিই: যদি নিশ্চিত না হও, শাওয়াল পর্যন্ত অ’প'েক্ষা করুন।”
রমজানে বিয়ের প্রস্তুতি: ৫টি টিপস
১. সহ'বাসের সময় নির্ধারণ: ইফতারের পর থেকে ফজর পর্যন্ত সময়কে প্রাধান্য দিন।
২. হালকা অনুষ্ঠান: দিনের বেলা সিম্পল মেহেদী, রাতে ওয়ালিমা।
৩. দোয়া ও ইবাদত: বিয়ের আগে-পরে ইস্তিখারা পড়ুন, কুরআন তিলাওয়াত করুন।
৪. চিকিৎসক পরামর'্শ: যদি স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকে, ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৫. পরিবারের সমর'্থন: সবাইকে রোজার সময়সূচি ও বিধিনিষে'ধ জানান।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্র: রমজানে বিয়ের নিকাহ পড়ানো যায় কি?
উ: হ্যাঁ, নিকাহ পড়ানোতে কোনো সমস্যা নেই। তবে দিনে রোজা রেখে ইমাম সাহেবকে ডাকুন।
প্র: বিয়ের কাবিননামা সই করতে রোজা ভাঙবে কি?
উ: না, কাবিননামা সই করা রোজা ভ''ঙ্গ করে না।
প্র: রমজানে বিয়ে করে লজিং সারতে গেলে রোজা রাখা যাব'ে?
উ: হ্যাঁ, তবে ক্লান্তি এড়াতে সহজ কাজ করুন।
উপসংহার: ইবাদত ও দাম্পত্যের ভারসাম্য
রমজানে বিয়ে ইসলামি দৃষ্টিতে জায়েজ, তবে এতে দায়িত্বও বেশি। যদি আপনি আ'ত্মসংযমী হন এবং ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যাঘা'ত না ঘটে, তবে এই পবিত্র মাসেই শুরু করুন দাম্পত্য জীবন। মনে রাখবেন, “ইসলাম সহজ, কঠিন নয়”—সঠিক নিয়ত ও সতর্কতাই পারে এই দুটি ইবাদতের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে।