অ'ভিনেত্রী তাসনুভা তিশার অ'ভিযোগ—নাটকের শুটিং থেকে কাস্টিং, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন নায়করা! জানুন সিন্ডিকে'টের অদৃশ্য শিকল ও শিল্পজগতের ভবি'ষ্যৎ।
ভূমিকা: যখন নায়কের ফোনে ঠিক হয় শুটিংয়ের সময়!
“হ্যালো, কাল সকাল ৭টায় শুটিং। লোকেশনটা আগের মতোই।” ফোনের অ’প'র প্রান্ত থেকে কথা বলছেন নাটকের নায়ক। পরিচালক নন, সহ-শিল্পী নন—এভাবেই প্রতিদিন শিডিউল পাচ্ছেন অ'ভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। এটি কোনো বিচ্ছিন'্ন ঘটনা নয়; বাংলাদেশের নাট্য জগতে এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তিশা ফুঁটিয়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট কালচারের চাঞ্চল্যকর দিকগু'লি। তাঁর কথায়, “নায়কদের হাতেই আজ নাটকের রিমোট কন্ট্রোল। পরিচালক নন, আমর'া শিল্পীরাও নই।”
তিশার অ'ভিযোগ: “নায়করা কেন নির্ধারণ করবেন আমা'র মেকআপ আর্টিস্ট?”
১. শুটিং থেকে কাস্টিং: নায়কদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ
তিশার মতে, নাট্য জগতের প্রায় সবকিছুই আজ নায়ক-নায়িকাদের হাতের মুঠোয়:
- কাস্টিং: “মায়ের চরিত্রে কে হবেন, বাবার ভূমিকায় কে—সব সি'দ্ধান্ত নেন নায়ক। পরিচালককে জিজ্ঞাসাও করা হয় না।”
- টেকনিক্যাল টিম: মেকআপ আর্টিস্ট, ডিওপি (ক্যামেরাম্যান), লাইটিং টেকনিশিয়ান—এমনকি খাবারের মেনু পর্যন্ত নায়কের পছন্দ।
- লোকেশন ও শিডিউল: “পরিচালকের পরিবর্তে নায়কের কাছ থেকে ফোন পাই—কখন, কোথায় শুটিং হবে!”
বাস্তব উদাহরণ: ২০২৩ সালের জনপ্রিয় নাটক “মায়ার সংসার”-এ নায়ক নিজের প্রিয় মেকআপ আর্টিস্টকে চাপিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
২. চিত্রনাট্যের উপর হস্ত'ক্ষেপ: “সংলাপ বদলে দেন নায়ক!”
তিশা উল্লেখ করেন, অনেক সময় নায়করা চিত্রনাট্যের সংলাপ নিজেদের সুবিধামতো পরিবর্তন করেন:
- “গল্পের প্রয়োজনে পরিবর্তন হলে আলোচনা করুন। কিন্তু নায়ক একতরফা সি'দ্ধান্ত চাপিয়ে দেন।”
- “এতে চরিত্রের গভীরতা নষ্ট হয়, দর্শকও বিভ্রান্ত হন।”
সিন্ডিকে'টের জন্ম: কেন এই অদৃশ্য শাসন?
নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতি: টিআরপি থেকে টাকা
- টিআরপি যো'দ্ধা: চ্যানেলগু'লি নায়ক-কেন্দ্রিক নাটককেই অগ্রাধিকার দেয়, কারণ তাদের নামে দর্শক টানেন।
- প্রযোজকের ভূমিকা: অনেক প্রযোজক নায়কদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিব'দ্ধ—এটি “নিরাপদ বিনিয়োগ”।
- জোটব'দ্ধতা: কয়েকজন শীর্ষ নায়ক-পরিচালক-প্রযোজকের অঘোষিত জোট, যারা নতুন প্রতিভাকে দমিয়ে রাখে।
পরিসংখ্যান: ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৫% নাটকের প্রধান চরিত্রে একই ১০ জন নায়ক-নায়িকা।
মনস্তত্ত্ব: ক্ষমতার মা'দকতা
মনোবিদ ড. ফারহানা আহমেদের বিশ্লেষণ:
- “ক্ষমতা পেলে মানুষ তা ধরে রাখতে চায়। নাট্য জগতে নায়করা ‘স্টার’—তাদের এই অবস্থান টিকিয়ে রাখতে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা জন্ম নেয়।”
শিল্পীদের উপর প্রভাব: আ'ত্মসম্মান বনাম বেকারত্ব
তিশার মর'্মান্তিক স্বীকারোক্তি: “ক্যারিয়ার বদলানোর ভাবছি!”
- “যাদের আ'ত্মসম্মানবোধ আছে, তাদের পক্ষে এ ব্যবস্থায় টিকে থাকা কঠিন।”
- “অনেক প্রতিভাবান শিল্পী পেশা ছাড়ছেন—কেউ ফ্যাশন ডিজাইনার, কেউ উদ্যোক্তা।”
কেস স্টাডি: অ'ভিনেত্রী মৌসুমী হা'মিদ (ছদ্মনাম) ২০২১ সালে নাটক ছেড়ে অনলাইন বিজনেস শুরু করেন—নায়িকার “ডিভা ডিমান্ড” সহ্য করতে না পেরে।
দর্শকের ক্ষ'তি: একই মুখ, একই গল্প
- “নতুন চরিত্র, গল্পের অভাব—দর্শকও ক্লান্ত হচ্ছেন,” বলেন সমালোচক রবিন মিশ্র।
- ডেটা: ২০২৩ সালে ৪০% দর্শক OTT প্ল্যাটফর্মে বিদেশি সিরিজ দেখছেন—বাংলাদেশি নাটকের একঘেয়েমির কারণে।
সমাধানের পথ: কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
১. শক্তিশালী ইউনিয়ন গঠন
- অ'ভিনেতা জাহিদ হাসান প্রস্তাব করেন: “শিল্পীদের একটি সমিতি তৈরি করুন, যারা অন্যায়ের বিরু'দ্ধে লড়বে।”
২. পরিচালকদের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনা
- পরিচালক অনম বিশ্বা'সের মন্তব্য: “আমা'দের সৃজনশীল স্বাধীনতা ফিরে পেতে হবে। নায়ক-প্রযোজকের চাপে নয়, গু'ণমানই হোক অগ্রাধিকার।”
৩. দর্শকের সচেতনতা
- “নতুন মুখ, নতুন গল্পের নাটক দেখে রেটিং দিন,” অনুরোধ তিশার।
FAQ: তিশার অ'ভিযোগ সম্পর্কে জরুরি প্রশ্নোত্তর
Q: তিশা কোন নাটকগু'লিতে অ'ভিনয় করেছেন?
A: “কন্ট্রাক্ট”, “বউের মন”, “নিঃশ্বা'স আমা'র তুমি” উল্লেখযোগ্য।
Q: সিন্ডিকে'টের বিরু'দ্ধে আগে কারা' কথা বলেছেন?
A: অ'ভিনেতা শাকিব খান, মাহিয়া মাহি, ও পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম।
Q: এই সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
A: হ্যাঁ, শিল্পী ইউনিয়ন, দর্শক সচেতনতা ও মিডিয়া নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
উপসংহার: সিন্ডিকেট ভাঙার পালা
তিশার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে শত শিল্পীর নিরব চিৎকার। নাট্য জগতের এই বি'ষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হলে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা—শিল্পী, পরিচালক, দর্শক সবার। মনে রাখতে হবে, নায়ক নয়—গল্পই নাটকের আসল নায়ক।
সোর্স: তাসনুভা তিশার সাক্ষাৎকার, বাংলাদেশ ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মনোবিদ ও সমালোচকদের বিশ্লেষণ।